বার্তা লিপি প্রতিবেদন,শিলচর,৩ আগস্ট: অবশেষে নিখোঁজ হওয়ার চারদিন পর উদ্ধার হলো শিলচর দাস কলোনির যুবক বিক্রম জিত ঘোষের মৃতদেহ। মঙ্গলবার কাঁঠাল রোডের এক জলা থেকে উদ্ধার করা হয় সদ্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বিক্রমের মৃতদেহ। জলায় ভেসে থাকা অবস্থায় ছাত্রটির মৃতদেহ উদ্ধার হওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র চাঞ্চল্যের । বিক্রমের মৃতদেহ উদ্ধারে পর ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে। বিক্রমের মৃতদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ তিন কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতিমধ্যে আটক করেছেন।
গত শনিবার মাধ্যমিক চূড়ান্ত পরীক্ষার রিজাল্ট প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল দাস কলোনির ইন্দ্রানী সরণির বাসিন্দা উত্তম ঘোষের পুত্র বিক্রমজিত। পরীক্ষার রেজাল্ট পাওয়ার পর অন্যান্য দিনের ন্যায় বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিল বিক্রম। তিন বন্ধুর সঙ্গে বিকেল চার ঘটিকায় সে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে সে আর বাড়ি ফিরেনি। রবিবার পুলিশের কাছে বিক্রমের নিখোঁজ সংক্রান্তিয় মিসিং রিপোর্ট করেন তার বাবা উত্তম ঘোষ। এরপরও বিক্রমকে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হওয়ার প্রতিবাদে সোমবার রাঙ্গিরখাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করেছিলেন দাস কলোনির কিছু ক্ষুব্ধ লোক।
এদিকে, চার দিন ধরে বিক্রমের কোন সন্ধান না পাওয়াতে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় তার পরিবার ও স্থানীয় লোকেরা। আত্মীয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রমের খোঁজখবর নেওয়ার পর তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই দাস কলোনি এলাকায় এক খবর আসে। খবর অনুযায়ী, বিক্রম নিখোঁজ হওয়ার দিন অর্থাৎ গত শনিবার বিক্রম বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল দাস কলোনির তিন কিশোরকে। এই খবরের ভিত্তিত, মঙ্গলবার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার অসীম দাস ডেকে আনেন ওই তিন কিশোরের মধ্যে আচার্য (১৬) পদবীর কিশোরটিকে। বিক্রমের নিখোঁজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তাকে। প্রথম অবস্থায় কিশোরটি বিক্রমের ব্যাপারে কিছু জানে না বলে বললেও অবশেষে চাপে পড়ে সে সব কাহিনী খুলে বলে।
কিশোরটির বয়ান অনুযায়ী, বিক্রম নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার, দাস কলোনির নুনিয়া (১২), দাস (১৫) পদবীর দুই বন্ধুর সঙ্গে বিক্রম ও সে গিয়েছিল কাঁঠাল রোডের দিল্লি পাবলিক স্কুলের পিছনে থাকা এক খালি জায়গায়। যেখানে রয়েছে কিছু বড় আকারের গর্ত। জলার মত ওই এলাকায় শেখা যায় সাঁতার কাঁটা । শুক্রবার তারা সাঁতার কাটার জন্য ওই জায়গা পছন্দ করে পরের দিন শনিবার বিকেলে সেখানে চলে যায় । সাঁতার কাটা শেখার জন্য তারা চারজনেই জলে নেমে পড়ে। এভাবে সাঁতার কাটা শিখতে শিখতে হঠাৎ করে বিক্রম জলে ডুবে যায়। নিজেকে বাঁচার জন্য বিক্রম জলে অনেক হাবু ডাবু খেতে হয়। তাকে উদ্ধারের জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু আমরা কেউ সাঁতার কাটা না জানাই থাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমাদের চোখের সামনেই বিক্রমের মৃত্যু হয়।"
বিক্রমের মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা দিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়ে ১৬ বছর বয়সি ওই কিশোর। কিছু সময় পর কিছুটা প্রকৃতিস্থ হয় কিশোরটি আরও বলে বিক্রমের মৃত্যু দেখে আমরা যথেষ্ট ভীতি গ্রস্ত হয়েছিলাম। সেজন্য বিক্রমের মৃত্যুর বিষয়টি আমরা কাউকে না বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখান থেকে গোপনে বাড়িতে ফিরে আসি।
কিশোরের মুখে বিক্রমের মৃত্যুর কাহিনী শুনে অসীম বাবু ও স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে রাঙ্গিরখাড়ির পুলিশকে খবর দেন । ডেকে আনা হয় অন্য দুজন কিশোরকেও। এদেরকে সঙ্গে নিয়ে সদর থানার ওসি দিপুল কুমার বড়ো, রাঙ্গিরখাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সৌমারজ্যোতি রয় ও ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে জলায় ভেঁসে থাকা অবস্থায় প্রত্যেক্ষ করে বিক্রমের মৃতদেহ। বিক্রমের বাবা উত্তম ঘোষ মৃতদেহ শনাক্ত করে । পুলিশ মৃতদেহের আশপাশে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে বিক্রমের সাইকেল, গামোচা ও সে ব্যবহার করা মোবাইল ফোনের সিম কার্ড। সিমকার্ড উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও বিক্রমের মোবাইল সেট পাইনি পুলিশ। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমান মর্গে রাখা হয়েছে মৃতদেহ । বুধবার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে।
এদিকে, ঘটনাস্থলে বিক্রমের মোবাইলের সিম কার্ড উদ্ধারের পর ফের পুলিশের পক্ষ থেকে জেরা করা হয় তিন কিশোরকে। জেরায় তারা জানায় যে ওই সময় (বিক্রমের মৃত্যুর সময়) বিক্রমের মোবাইলে কারো ফোন এসেছিল। কিন্তু ভয়ে তারা মোবাইলটি খুলে সিমটি সেখানে রেখে মোবাইলটি জলে ফেলে দেয় ।
কিশোররা এভাবে বললেও পুলিশ খতিয়ে দেখছে সমগ্র বিষয়। বর্তমান তিন কিশোরকে আটক করে জেরা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। সদর থানার ওসি দিপুল কুমার বড়ো জানান, ইতিমধ্যে বিক্রম বিক্রমের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়। বিক্রমকে খুন করা হয়েছে না এর পিছনে রয়েছে অন্য কিছু, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।